ডেস্ক নিউজ:
খুলনার সেই আলোচিত রহিমা অপহরণ মামলা আসামীদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিছেছেন আদালত একি সাথে বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ। ২০২২ সালে দেশব্যাপী সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিলো রহিমা অপহরণ নাটক। অপহরণ নাটকের এ মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ প্রায় ২১ মাস হয়রানির শিকার হয়েছেন মামলার আসামীরা। অবশেষে অপহরণ নাটকের এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন মামলার সকল আসামীরা।
অব্যাহতি প্রাপ্তরা হলেন রহিমা বেগমের প্রতিবেশী মহিউদ্দিন খোকন, তার ভাই ইঞ্জিনিযার গোলাম কিবরিয়া, প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম পলাশ, তার ভাই মোহাম্মদ জুয়েল , হেলাল শরীফ এবং রহিমা বেগমের স্বামী বেল্লাল হোসেন।
সোমবার (১৩ মে) খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ ‘র বিজ্ঞ বিচারক তাদেরকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। বাদী পক্ষের আইনজীবি এ্যাডঃ তারিক মাহমুদ তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আলোচিত মামলাটি বাদী পক্ষের নারাজীতে পুলিশ, পিবিআই এবং সিআইডি তিনটি সংস্থা তদন্ত করে। সর্বশেষ সিআইডি তদন্ত শেষে বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত তা গ্রহণ করে । গত সোমবার (১৩ মে) খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর বিজ্ঞ বিচারক আলোচিত রহিমা অপহরণ মামলা থেকে সকল আসামিকে অব্যাহতি প্রদান করেন।
মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) তাদের প্রতিবেদনে রহিমা বেগম অপহরণ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মরিয়ম মান্নান, রহিমাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ১৭/৩০ ধারা মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশ করেন। অপর তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ(সিআইডি) বিজ্ঞ আদালতে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দান এবং বাদী আদুরী আক্তার(২২), ভিকটিম রহিমা বেগম(৫২) এবং মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পরস্পর যোগসাজসে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে উক্ত আইনের ১৭/৩০ ধারা মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দৌলতপুর থানার চুড়ান্ত প্রতিবেদন নং-৯ (মিথ্যা) বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন। মামলার রায়ে বাদী পক্ষ উচ্চ আদালতে যাবেন বলে তাদের আইনজীবি জানিয়েছেন।
আদালত সুত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট খুলনার দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বর পাশা বনিকপাড়া(খানাবাড়ী) নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। নিখোঁজ হওয়ার দিন রাতে রহিমা বেগমের ছেলে রিয়াজ আল সাদী দৌলতপুর থানায় একটি সাধারন ডায়রী করেন। যার নং-১৪৫৪। এ ঘটনার একদিন পর ২৮ আগস্ট রহিমা বেগমের কন্যা আদুরী আক্তার বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় অপহরণের একটি মামলা করেন(মামলা নং-১৫/১৩২, তাং- ২৮/৮/২২)। মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে প্রতিবেশী মহিউদ্দিন, তার ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার গোলাম কিবরিয়া, প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম পলাশ, তার ভাই মোঃ জুয়েল, হেলাল শরীফ এবং ভিকটিম রহিমা বেগমের স্বামী বেল্লাল হোসেনের নাম উল্লেখ করে।
মামলাটি তদন্তের জন্য দৌলতপুর থানার এস আই মোঃ লূৎফুল হায়দারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অনেক নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্দেহভাজনদেরকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। মামলাটি অধিক তদন্তের জন্য পিবিআই এর কাছে হস্তান্তর করলে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আব্দুল মান্নান। অনেক নাটক মঞ্চস্থ করার পর পিবিআই নিখোঁজ রহিমা বেগমকে নিখোঁজের ২৯ দিন পর ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের জনৈক আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ী থেকে সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে।
পিবিআই তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিবেশীদের ফাঁসাতে অপহরনের মূলহোতা মরিয়ম মান্নানের নেতৃত্বে তার মা রহিমা বেগম অপহরনের নাটক সাজায় বলে উল্লেখ করে। রহিমা বেগম অপহরণের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মরিয়ম মান্নান কাজ করে বলেও জানান। আলোচিত ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে পিবিআই মামলাটি তদন্ত শেষে অপহরণের ঘটনাটি মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করার অপরাধে বাদীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে উক্ত আইনের ১৭/৩০ ধারা মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে আদালতে আবেদন পূর্বক দৌলতপুর থানার চুড়ান্ত প্রতিবেদন নং-১(মিথ্যা) বিজ্ঞ আদালতে ৮/২/২০২৩ তারিখ দাখিল করেন।
এদিকে তদন্ত প্রতিবেদনের উপর বাদী পক্ষের নারাজির কারণে বিজ্ঞ আদালত ঘটনাটি পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ প্রদান করেন। ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই মামলার তদন্তভার গ্রহন করেন সিআইডি’র পরিদর্শক মোঃ রবিউল ইসলাম। এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন খুলনা সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার ও বর্তমান সিআইডি পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শম্পা ইযাসমিন।
সিআইডি আলোচিত ঘটনার তদন্ত শেষে মামলার দায় থেকে আসামীদের অব্যাহতি প্রদান ও বাদী আদুরী আক্তার(২২), ভিকটিম রহিমা বেগম(৫২) এবং মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পরস্পর যোগসাজসে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দৌলতপুর থানার চুড়ান্ত প্রতিবেদন নং-৯(মিথ্যা) বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন। খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এর বিজ্ঞ বিচারক আলোচিত রহিমা অপহরণ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলা থেকে সকল আসামিকে অব্যাহতি প্রদান করেন।
মামলা থেকে রেহাই পাওয়া মামলার ১ নং আসামি মহিউদ্দিন খোকন খুলনা যাযযায়দিনকে বলেন,দীর্ঘ প্রায ২১ মাস মিথ্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা জয়ী হয়েছি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সততার সাথে তাদের দায়ীত্ব পালন করেছেন। এজন্য আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যারা মামলার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের এবং সাংবাদিক ভাইদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ায় আমরা খুশী। তিনি বলেন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় যারা আমাদেরকে জড়িয়েছেন তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি পেলে সেদিন আমরানআরো বেশীখুশী হবো।
আলোচিত এই মামলার আসামী পক্ষের আইজীবী এ্যাডঃ তারিক মাহমুদ তারা বলেন, আলোচিত মামলাটি প্রায় এক বছর দুই মাস পর রায় দেওয়া হয়েছে, রায়ে আসামী পক্ষ ন্যায় বিচার পেয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার চুড়ান্তরিপোর্ট আদালতে গৃহীত হয়েছে। আদালতের বিচারক আসামীদেরকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এদিকে মামলার রায়ের বিরুদ্ধে বাদী পক্ষ উচ্চ আদালতে যাবেন বলে তাদের আইনজীবী এ্যাড. টুটুল জানিয়েছেন।