সর্বশেষ:

লেডি বাইকার লক্ষ্মী রানী

আমরা নারী আমরাও পারি ! আত্মপ্রত্যয়ী লেডি বাইকার লক্ষ্মী রানী

লেডি বাইকার লক্ষ্মী রানী
Facebook
Twitter
LinkedIn

ওয়াহিদ মুরাদ,বিডিনিউজ :
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই উক্তির প্রতিফলন ঘটে চলেছে এখন বাংলাদেশের নারীদের মধ্যেও। সভ্যতার অভাবনীয় সাফল্যের পিছনে নারী ও পুরুষ সমান অবদান অনস্বীকার্য। নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের একক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নের কথা কল্পনা করা যায় না।

নারীদের ক্ষমতায়নে অনন্য ভূমিকায় বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আমলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন ও তৃণমূল পর্যন্ত নারীর ক্ষমতায়নের প্রসার ঘটেছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয় এমন উপলব্ধি থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি উপহার দিয়েছিলেন ৭২ এর সংবিধান। যে সংবিধানে বলিষ্ঠভাবে নারী পুরুষের মর্যাদা সমুন্নত করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জাতির পিতার দর্শন হৃদয়ে ধারণ করে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক,পারিবারিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের নতুন ধারা সূচিত করেছেন। নারী শিক্ষা নিশ্চিত করা অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করা এবং সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন করে।

জাতীয় সংসদের স্পিকার পদে একজন নারীকে নির্বাচিত করেন। শেখ হাসিনাই প্রথম তার মন্ত্রিসভায় প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নারীকে দায়িত্ব দেন। সংসদ উপনেতা হন একজন নারী। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে অবদান রাখায় গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ, প্লানেট ফিফটি ফিফটি চ্যাম্পিয়ন, এজেন্ট অফ চেঞ্জসহ নানাবিধ সম্মাননা অর্জন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমান সরকারের আমলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন ও তৃণমূল পর্যন্ত নারীর ক্ষমতায়নের যে প্রসার ঘটেছে তারই ফলশ্রুতিতে দেশে এখন জীবন জীবিকার তাগিদে প্রচুর লেডি (মহিলা) বাইকার দেখা যায়। খুলনা জেলার প্রত্যন্ত কয়রা উপজেলার এমন একজন সাহসী ও আত্মপ্রত্যয়ী লেডি বাইকারের নাম লক্ষ্মী রানী রায়। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। শ্রীরামপুর কালনা অন্তাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তিনি।

পাশাপাশি তিনি স্কাউটের একজন ট্রেনারও বটে। লেডি বাইকার হওয়ার বিষয়ে তিনি তার নিজের কথা ফেসবুক পেজে এভাবে ব্যক্ত করেছেনষ! আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি তার খুবই আদরের একমাত্র কন্যা। আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমার কাকা আমাকে সাইকেল চালানো শেখায়। সেখান থেকে শুরু। আমাদের গ্রামের রাস্তায় আমি প্রায় দিন বিকালে সাইকেলের পিছন সিটে একজন বান্ধবীকে সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। ছুটির দিনে বিকাল বেলায় হাইওয়ে রাস্তা ধরে বান্ধবীদের সাথে নিয়ে ১০-১২ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘুরতে যেতাম। ছোট বেলা থেকে আমি একটু সাহসী। তখন আমার খুব ইচ্ছে করতো বাইক চালাতে কিন্তু আমার বাবাকে কখনো রাজি করাতে পারেনি।

আমার বাবা বলেন,মোটরসাইকেল মানে মরণ সাইকেল। আমি রাতে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতাম বাইক চালাচ্ছি। ভেবেছিলাম আমার এই স্বপ্ন কখনো বাস্তবে রূপ নেবে না কারণ কলেজে পড়া অবস্থায় আমার বিয়ে হয়ে যায় কিন্তু পড়ালেখা চলতে থাকে। হঠ্যাৎ একদিন আমার স্বামী আর আমি আমার বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে কুকুরের সাথে এক্সিডেন্ট করে আমার স্বামীর বাম পা ভেঙ্গে যায়। খুবই খারাপ অবস্থা দেখে বাংলাদেশর ডাক্তারা বলে আর কখনো সে হাঁটতে পারবে না। কিন্তু আমি ভেঙ্গে পড়েনি,তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাই এবং ভালভাবে তার অপারেশন হয়। ডাক্তার বলে ছয় মাস পরে সে হাঁটতে পারবে। নিরুপায় হয়ে আমার স্বামীকে তখন চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয়। তার ঠিক দুই মাসপর আমার চাকুরী হয়।

আমার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব ১৭কিলোমিটার। তার মধ্যে দুই কিলোমিটার পায়েহাটা রাস্তা,একটা ভ্যান ও সে রাস্তায় চলে না। এমতাবস্থায় আমার অসুস্থ স্বামীকে রেখে প্রতিদিন স্কুল করা খুবই কষ্টকর ছিল। তখন আমি সিদ্ধান্ত নেই,আমি বাইক চালাবো। যে কথা সেই কাজ,আমরা নারী আমরাও পারি এই কথায় বলিয়ান হয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাইক কিনে ফেললাম এবং কিভাবে চালাতে হয় স্বামীর মুখে শুনে একাই চালানো শিখলাম ও তিন দিনের দিন চালিয়ে স্কুলে চলে গেলাম।

তারপর থেকে শুরু হলো আমার পথ চলা। ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে বাইক নিয়ে আমি সবখানে যাই। আমার উপজেলায় একমাত্র আমি ছাড়া আর কোন লেডি বাইকার শিক্ষক নেই। আমি একজন স্কাউটের ট্রেনার। ট্রেনিং করাতে আমাকে বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়। ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত আমি একা ড্রাইভ করে গেছি ট্রেনিং করাতে। ঈশ্বরের আর্শীবাদে আমি কখনো এক্সিডেন্ট করেনি। সবাই আমার জন্য আর্শীবাদ করবেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সর্বশেষ খবর

turan hossain rana