তুরান হোসেন রানাঃ
খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা, দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা সহ বিভিন্ন উপজেলায় কিশোর ও যুব সমাজ ভয়াল অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। বিকেল থেকেই চায়ের দোকান, খেয়াঘাট, ভ্যানস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন মোড় এমনকি রাস্তার পাসের ফাকা জায়গাও গরম থাকে অনলাইন জুয়া খেলায়। জুয়াড়িরা মনে করে এতে কোন ঝামেলাই নেই। কারণ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চলে এ খেলা। যা প্রশাসনের নজরে আসে না।
এদিকে এলাকার উঠতি কিশোর ও যুবকেরা অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ায় অভিভাবকরা আছে চরম অশান্তি, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। কারণ জুয়ার টাকা যোগাতে অনেকে পরিবারের পকেট কাটছে, আবার অনেকে চুরির মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে জলমা এলাকার কয়েকজন যুবক বলেন, এই জুয়া খেলতে লাগে অনলাইন জুয়ার এ্যাপস এবং এ্যাপস ইনস্টল করার পর লাগে টাকা।
এই টাকা রিচার্জ করতে মধ্যসত্ত্ব ভোগি এজেন্টের কাছ যেতে হয়। এতে করে লাভবান হচ্ছে মধ্যসত্বভোগি এজেন্টরা আর ধ্বংস হচ্ছে কিশোর ও যুব সমাজ। এজেন্টের যত একাউন্ট হবে ততো বেশি লাভ। কারণ এই টাকা রিচার্জ করতে কাটা হয় কমিশন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বটিয়াঘাটা এলাকার এক যুবক বলেন, অনলাইনের এই জুয়া খেলাটা অন্ধকারে খেলার মতো। বাঁধলে বাজিমাত, না বাধলে কুপোকাত। তারপরও অনেকেই সহজে বড়লোক হওয়ার আশায় বাজি ধরে। যারা খেলে তারাও জানেনা যে কারা এই এ্যাপস গুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। টাকা কখন আসছে, কখন যাচ্ছে। হারলে মনে হচ্ছে, পরের দানেই পাব। জিতলে মনে হয়, আরেকবার ধরে দেখি, বাঁধতেও তো পারে। সব মিলিয়ে একটা ঘোরের মধ্যে সময় চলে যায়।
অনলাইনে জুয়া খেলার সাইটগুলো নেট দুনিয়ায় ‘বেটিং সাইট’ নামে পরিচিত। মূলত শিক্ষার্থী, বেকার যুবক ও তরুণরা অনলাইন জুয়ায় বেশি আসক্ত। সাইটগুলোতে অ্যাকাউন্ট খুলে নিবন্ধিত হয়ে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে চিপস, বিট কয়েন বা অনলাইন মুদ্রা (ডিজিটাল কারেন্সি) কিনতে হয়। এরপর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিয়ে জুয়া খেলায় অংশ নিতে হয়। বাংলাদেশে এই জুয়ার বৈধতা নেই। দেশীয় চক্র মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আদান-প্রদান করে থাকে জুয়ার টাকা। পরে আন্তর্জাতিক কার্ড ব্যবহারসহ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করে।
দাকোপ এলাকার হাবিবুর রহমান নামে এক অভিভাবকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা আছি বিপদে। ছেলে মেয়েরা গেম খেলছে নাকি জুয়া খেলছে বুঝতে পারছি না। বাড়ি থেকে টাকা চুরি করে মোবাইলে পেমেন্ট করে এই গেম খেলছে। টাকা না দিতে চাইলে করছে চরম অশান্তি, চিল্লাপাল্লা এমনকি মারামারীও। যা প্রতিটা পরিবারের জন্য সহ্য করা খুব ই কঠিন ব্যাপার হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নজরদারির মাধ্যমে গেটওয়ে এবং প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে অনলাইন ক্যাসিনো আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। এ জন্য সরকারকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানান তাঁরা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা হলে তার বলেন, “আমরা গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন মহল্লায় এই ভয়াল নেশা অনলাইন জুয়া যাতে না খেলে তার জন্য সবাইকে বলছি। এই অনলাইন জুয়ার কারনে চুরি বেড়ে যাচ্ছে বলে আমার মনে হয়। অনলাইন জুয়া খেলে ধ্বংস হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে গ্রামের অনলাইন জুয়ার এজেন্টরা। এই ভয়াল নেশা (অনলাইন জুয়া) থেকে রক্ষা পেতে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”