
খুলনা ফুলতলা থেকে এস এম মমিনুর রহমান
খুলনার ফুলতলায় অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে ও মানব শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক কেমিক্যাল দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে চিপস। ফুলতলার গরু হাটখোলার পাশে অবস্থিত এইচ আর ফুড নামে চিপস ও সেমাই তৈরীর একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোঃ হাসান(৪১) এর বিরুদ্ধে রয়েছে খাদ্যে ভেজাল দেওয়া সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ। সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহের সময় দেখা যায় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নোংরা পরিবেশে মানব শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক কেমিক্যাল, হাইড্রোজ, সাল্টু, কৃত্রিম রং দিয়ে প্রস্তুত করছে মুখরোচক এই চিপস।
কারখানার শ্রমিকরা কেউ খালি পায়ে কেউবা আবার যে স্যান্ডেল পরে বাহিরে যাচ্ছে সেই স্যান্ডেল পরে এসেই আবার চিপস সহ চিপসের স্থান পাড়াচ্ছে এবং চিপস প্রস্তুত করছে। শুধু তাই নয় চিপস যে স্থানে রাখা হচ্ছে ফ্লোরের সেই স্থানগুলো রয়েছে ভাঙাচোরা। সেখান থেকে বালি উঠতেই থাকে। সংবাদ সংগ্রহের সময় চিপসে ভেজাল ও ক্ষতিকারক কেমিক্যাল দিয়ে চিপস উৎপাদনের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার পর প্রতিষ্ঠানের মালিক হাসান জানতে পেরে তার ব্যবসায়িক পার্টনার মোঃ সুমন(৩৩) কে বলেন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার জন্য।
মোঃ সুমন মোল্যা নোংরা পরিবেশে ও ক্ষতিকারক কেমিক্যাল দিয়ে চিপস প্রস্তুত করে অপরাধ ও অন্যায় করছেন বলে নিজ মুখে স্বীকার করেন। এরপর প্রতিষ্ঠানের মালিক হাসান নিজ মুখে স্বীকার করেন তিনি খাবারে সাল্টু নামে এক ধরনের কেমিক্যাল মেশাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন চিপসে সাল্টু, কৃত্রিম রং ব্যবহার করার অনুমতি আছে। হাসান এ সকল ক্ষতিকারক উপাদান ব্যবহারের বৈধতা আছে বলে চ্যালেঞ্জ করে। খাদ্যে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক সাল্টুর ব্যবহার নিয়ে এবং ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানার বিষয়ে দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন খাদ্যে হাইড্রোজ, সাল্টু, কেমিক্যাল যুক্ত রং ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগের পাশাপাশি মরণব্যাধি ক্যান্সার পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভেজাল খাদ্য তৈরির বিষয়টি হাসান ও সুমন মোল্যা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মেশানোর বিষয়ে খুলনা বিএসটিআই এর উপ-পরিচালক মোঃ আলাউদ্দিন হুসাইন (সি এম) বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদন করা যাবে না। অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পণ্য উৎপাদন, প্যাকিং, স্টোরিং করতে হবে। ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে যদি জুতা ব্যবহার করতেই হয় তাহলে নিজস্ব জুতা থাকবে ঐটা শুধু ঐ কারখানা প্রাঙ্গণে ব্যবহার হবে বাইরে ব্যবহার হবে না।
ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে যারা কাজ করবে তাদেরকে অবশ্যই এ্যাপ্রোন, ক্যাপ, মাস্ক, হাতে গ্লাভস পড়ে স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে মেনে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন ফুড কালারের বাইরে অন্য কোন কালার মানুষের শরীরের জন্য উপযোগী নয়। ঐ ধরনের কালার যদি খাবারে ব্যবহার করা হয় ঐ খাবার খাওয়ার পর কারো ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রি, পেটের রোগ হবে ক্যান্সার পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ফুড কালার থাকবে তরল আকারে।
খাবারে হাইড্রোজ মেশানোর বিষয়ে বলেন, হাইড্রোজ কোন খাদ্য পণ্য না। এটা পেটে গেলে গ্যাস সৃষ্টি হবে ক্যান্সার পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনীম জাহান বলেন, খাদ্যে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক উপাদান কোন প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করলে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।