পাইকগাছা (খুলনা ) প্রতিনিধি
সুন্দরবন থেকে আহরণকৃত গোলপাতা মজুদ শেষে বিক্রি শুরু হয়ে আধুনিকতার ছোয়ায় গোলপাতার ব্যবহার কমতে শুরু হয়েছে। সেই সাথে টিনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় গোলপাতার চাহিদা কমছে। গত বছরের অবিক্রিত গোলপাতা স্তুপ আকারে পড়ে আছে। বিক্রি না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পাইকগাছা উপজেলার নদ নদী সংলগ্ন বিভিন্ন হাটবাজার ও মোকামে গোলপাতা মজুদ করে বিক্রি করা হচ্ছে। পাইকগাছা পৌর বাজারে ট্রলার ঘাট,শিববাটী, আলমতলা, চাঁদখালী, আগড়ঘাটা, কপিলমুনি বাজারে গোলপাতার মজুদ ও বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে গোলপাতা সরবরাহ কম থাকায় গোলপাতার দাম বেশী বলে ক্রেতারা জানিয়েছে।
গোলপাতা ঘরের চালে ছাউনির জন্য উপকুল সহ বিভিন্ন জেলায় খুব জনপ্রিয়। এ পাতার ছাউনি ঘর গরমের সময় ঠান্ডা ভাব এবং শীতের সময় গরমভাব অনুভুত হয়।তাই গোলপাতার একটা আলাদা কদর রযেছে। গোলপাতা দিয়ে ভালভাবে ঘরের ছাউনি দিলে ৩-৪ বছর ভালোভাবে পার হয়ে যায়।
উপকুলসহ যশোর, মাগুরা, রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কমবেশি গোলপাতার চাহিদা রয়েছে। গোলপাতা খুচরা ও পাইকারী বিক্রি হচ্ছে। আড়ৎ থেকে ব্যবসায়ীরা ট্রাক, ইঞ্জিন ভ্যান, ট্রলারযোগে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছে। গোলপাতা ব্যবসায়ী সূত্রে জানাগেছে, গোলপাতার মজুদ করা শুরু হয়েছে। বিগত বছর গোলপাতার ব্যবসা ভাল ছিল না। এ বছর কিছুটা ব্যবসা হতে পারে বলে তারা ধারনা করছে। সবে মাত্র গোলপাতা বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রায় আষাঢ় মাস পর্যন্ত বিক্রি হবে। তাছাড়া বৃষ্টি শুরু হলে গোলপাতার বিক্রি বেড়ে যাবে।
গোলপাতা ব্যবসায়ীরা সুন্দরবনে বাওয়ালী ও মহাজনের নিকট থেকে ট্রলার চুক্তি গোলপাতা ক্রয় করে। তারপর গোলপাতা খোলা জায়গায রেখে বিক্রয় করে। পাইকগাছা পৌর এলাকার জিনারুল ইসলাম, আতিয়ার রহমান, মোতলেব সরদার, শামছুর ও লেয়াকত হোসেন গোলপাতার ব্যবসা করছে। গোলপাতা ব্যবসায়ী আতিয়ার জানান, কমবেশি গোলপাতা বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের অবিক্রিত পুরাতন গোলপাতা কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। গত বছর গোলপাতা বিক্রি না হওয়ায় তার আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানান।
ব্যবসায়ী ও বাওয়ালী সূত্রে জানাগেছে, সুন্দরবন থেকে গোলপাতা পরিবহনের জন্য একটি নৌকা ২টি ট্রিপ দিতে পারে। বড় নৌকায় ব্যবসায়ীদের হিসাবে প্রায় ৯০-১০০ কাউন, ছোট নৌকায় ৭০-৮০ কাউন বহন করতে পারে। তারা জানায়, বনের গোলপাতা কাটা শেষ হয়েছে, কাটা গোলপাতা যা আছে তা বহন করা হচ্ছে। এ বছর বন বিভাগের তদারকি জোরদার থাকায় ওজনের অতিরিক্ত গোলবহন করতে পারছে না। এ জন্য গোলপাতার মূল্য বেড়ে গেছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবী করছে। প্রতি নৌকায় ৯জন বাওয়ালী গোলপাতা কাটা, আহরন ও মজুদের কাজে নিয়োজিত থাকে। প্রতি বড় নৌকায় গোলপাতা বহনে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ হয় এবং ছোট নৌকায় প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। নৌকা প্রতি গোল বিক্রি করে ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ হয়।
গোলপাতা ছোট-বড় হিসাবে খুচরা কাউন ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২শ টাকা ও পাইকারী ২ হাজার ৮শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৮০টি গোলে ১ পোন ২/৩ শত টাকা খুচরা বিক্রি হচ্ছে। গোলপাতা ক্রেতা ভিলেজ পাইকগাছার আবুল হোসেন জানান,পাইকগাছা সহ উপকূল এলাকার মৎস্য লিজ ঘেরের বাসাগুলো গোলপাতার ছাউনি। তা নতুন গোলপাতা ক্রয় করে ঘরের ছাউনি মেরামত করা হবে।
গোলপাতা ব্যবসায়ী মাহাবুব রহমান জানান, গোলপাতা কাটার পাশ পারমিট পেতে বিড়ম্বনা ও গোলপাতার মন প্রতি ধার্য্য কর বৃদ্ধি পেয়েছে। আর উপরিখরচ দিয়ে আগের মত লাভ হচ্ছে না। তাছাড়া বনে আগের মত ভালো মানের বড় গোলপাতা পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও ব্যবসায় টিকিয়ে রাখার জন্য জীবন বাজি রেখে গোলপাতা কাটতে হয়।
তাছাড়া একটি বড় নৌকা তৈরী করতে ইঞ্জিন সহ আনুসাঙ্গিক খরচ দিয়ে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। প্রতি বছর পুরোনা নৌকা মেরামত করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এ সব খরচ মিটিয়ে গোলপাতা ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। তারপরও মৌসুম শুরু হলে ব্যবসায়ীরা সকল বাধা অতিক্রম করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য সুরন্দরবন থেকে গোলপাতা আহরন করে।